অশ্রু
মণীন্দ্র গুপ্ত
পাখির মরণ যখন ঘনিয়ে আসে
তখন তার ডাকের মধ্যেও ব্যথা ফুটে ওঠে।
মাঠের কাকতড়ুয়ারাও তা বোঝে, সারা রাত তাদের হাঁড়িমাথায়
শিশির পড়ে পড়ে ভোরবেলায় চোখ ভিজে উঠেছে।
হেমন্তের ঘন কুয়াশার মধ্য দিয়ে তারা দেখে – কৃষক আসছে,
গোরু আসছে। ওদের চুনে আঁকা চোখ কি শেষ পর্যন্ত
আমার জ্যান্ত চোখের চেয়েও অনুভূতিপ্রবণ হল!
আমার কেউ আসেও না, যায়ও না।
রাত্রে গোরের থেকে যারা ওঠে তাদের কান্না কে শুনেছে!
যাবার আগে, আমার শেষ সান্ধ্যভোজের শক্ত পাউরুটিটুকু
অন্তত যাতে ভেজে
আমি সেইটুকু চোখের জলের অপেক্ষায় আছি।
মনিন্দ্র গুপ্ত কবি পরিচয় :
মণীন্দ্র গুপ্তর প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ ‘মৌপোকাদের গ্রাম’, ‘লাল স্কুলবাড়ি’, ‘ছত্রপলাশ চৈত্যে দিনশেষে’, ‘শরৎমেঘ ও কাশফুলের বন্ধু’ ইত্যাদি। অক্ষয় মালবেরি খ্যাত কবি মণীন্দ্র গুপ্তর জন্ম ১৯২৬ সালে অবিভক্ত বাংলার বরিশালের গৈলা গ্রামে। ১৯৪০-এর দশক থেকে কবিতা লিখেছেন । কৈশোর কেটেছে অসমের বরাক উপত্যকায় মামার বাড়িতে। একই সঙ্গে কবি, প্রাবন্ধিক, কথা সাহিত্যিক ও চিত্রশিল্পী মণীন্দ্রবাবু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ব্রিটিশ ভারতীয় সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়েছিলেন।
প্রথম কবিতার বই ‘নীল পাথরের আকাশ’ প্রকাশিত হয় ১৯৬৯ সালে। বাংলা কবিতার তৎকালীন অভিমুখের সম্পূর্ণ বিপরীতেই অবস্থান করছিল তাঁর রচনা। ১৯৯১- ‘চাঁদের ওপিঠে’ বের হয় ও এই প্রবন্ধ আলোড়ন তোলে।
১৯৯১-এ প্রকাশিত হয় আত্মজীবনী ‘অক্ষয় মালবেরি’-র প্রথম খণ্ড। তিন খণ্ডে বিন্যস্ত এই লিখন বাংলা সাহিত্যের এক উল্লেখযোগ্য সংযোজন। সম্পাদনা করেছেন ‘পরমা’ পত্রিকা।
১৯৭০-এর দশকে কবি রঞ্জিত সিংহের সঙ্গে যৌথ ভাবে সম্পাদনা করেছেন ‘এক বছরের শ্রেষ্ঠ কবিতা’-র মতো সংকলন। হাজার বছরের বাংলা কবিতা ঘেঁটে সংকলন করেছেন তিন খণ্ডে ‘আবহমান বাংলা কবিতা’।
২০১০ সালে পেয়েছেন রবীন্দ্র পুরস্কার। ২০১১ সালে সাহিত্য আকাদেমি।