যেতে যেতে এক নদীর সঙ্গে দেখা - সুভাষ মুখোপাধ্যায়

যেতে যেতে

সুভাষ মুখোপাধ্যায়


তারপর যে-তে যে-তে যে-তে

এক নদীর সঙ্গে দেখা।



পায়ে তার ঘুঙুর বাঁধা

পরনে

উড়ু-উড়ু ঢেউয়ের

নীল ঘাগরা।



সে নদীর দুদিকে দুটো মুখ।

এক মুখে সে আমাকে আসছি বলে

দাঁড় করিয়ে রেখে

অন্য মুখে

ছুটতে ছুটতে চলে গেল।



আর

যেতে যেতে বুঝিয়ে দিল

আমি অমনি করে আসি

অমনি করে যাই।

বুঝিয়ে দিল

আমি থেকেও নেই,

না থেকেও আছি।



আমার কাঁধের ওপর হাত রাখল

সময়

তারপর কানের কাছে

ফিসফিস করে বলল-



দেখলে !

কাণ্ডটা দেখলে !

আমি কিন্তু কক্ষনো

তোমাকে ছেড়ে থাকি না।



তার কথা শুনে

হাতের মুঠোটা খুললাম।

কাল রাত্রের বাসি ফুলগুলো

সত্যিই শুকিয়ে কাঠ হয়ে আছে।



গল্পটার কোনো মাথামুণ্ডু নেই বলে

বুড়োধাড়ীদের একেবারেই

ভালো লাগল না।

আর তাছাড়া

গল্পটা বানানো।

পাছে তারা উঠে যায়

তাই তাড়াতাড়ি

ভয়ে ভয়ে আবার আরম্ভ করলাম:


'তারপর যে-তে যে-তে যে-তে...

দেখি বনের মধ্যে

আলো-জ্বালা প্রকাণ্ড এক শহর।

সেখানে খাঁ-খাঁ করছে বাড়ি।

আর সিঁড়িগুলো সব

যেন স্বর্গে উঠে গেছে।



তারই একটাতে

দেখি চুল এলো করে বসে আছে

এক পরমাসুন্দরী রাজকন্যা।'...


লোকগুলোর চোখ চকচক করে উঠল।


তাদের চোখে চোখ রেখে

আমি বলতে লাগলাম-


'তারপর সেই রাজকন্যা

আমার আঙুলে আঙুল জড়ালো।

আমি তাকে আস্তে আস্তে বললাম:

'তুমি আশা,

তুমি আমার জীবন।'


শুনে সে বলল:

'এতদিন তোমার জন্যেই

আমি হাঁ করে বসে আছি।'

বুড়োধাড়ীরা আগ্রহে উঠে ব'সে

জিগ্যেস করল: 'তারপর?'


ব্যাপারটা তাদের মাথায় যাতে ঢোকে

তার জন্যে

ধোঁয়ায় ধোঁয়াকার হয়ে

মিলিয়ে যেতে যেতে আমি বললাম-


'তারপর ? কী বলব-

সেই রাক্ষুসীই আমাকে খেলো।'



1 মন্তব্যসমূহ

নবীনতর পূর্বতন