দরদালানের ভিড় — পৃথিবীর শেষে - জীবনানন্দ দাশ I ছড়া ও কবিতা

গোধূলি সন্ধির নৃত্য

জীবনানন্দ দাশ


দরদালানের ভিড় — পৃথিবীর শেষে

যেইখানে প’ড়ে আছে– শব্দহীন— ভাঙা—

সেইখানে উঁচু-উঁচু হরিতকী গাছের পিছনে

হেমন্তের বিকেলের সূর্য গোল— রাঙা—



প্রভাত 


চুপে-চুপে ভুলে যায়— জ্যোৎস্নায়।

পিপুলের গাছে ব’সে পেঁচা শুধু একা

চেয়ে দ্যাখে; সোনার বলের মতো সূর্য আর

রুপার ডিবের মতে চাঁদের বিখ্যাত মুখ দেখা।


হরিতকী শাখাদের নিচে যেন হীরের স্ফুলিঙ্গ

আর স্ফটিকের মতো শাদা জলের উল্লাস;

নৃমুণ্ডের আবছায়া— নিস্তব্ধতা—

বাদামী পাতার ঘ্রাণ— মধুকূপী ঘাস।


 ছোট শিশুদের একশত এর বেশি কবিতা ও গল্প সংগ্রহ


কয়েকটি নারী যেন ঈশ্বরীর মতো:

পুরুষ তাদের: কৃতকর্ম নবীন;

খোঁপার ভিতরে চুলে: নরকের নবজাত মেঘ,

পায়ের ভঙ্গির নিচে হঙকঙের তৃণ।


সেখানে গোপন জল ম্লান হ’য়ে হীরে হয় ফের,

পাতাদের উৎসরণে কোনো শব্দ নাই;

তবু তা’রা টের পায় কামানের স্থবির গর্জনে

বিনষ্ট হতেছে সাংহাই।


সেইখানে যূথচারী কয়েকটি নারী

ঘনিষ্ঠ চাঁদের নিচে চোখ আর চুলের সংকেতে


মেধাবিনী; দেশ আর বিদেশের পুরুষেরা

যুদ্ধ আর বাণিজ্যের রক্তে আর উঠিবে না মেতে।


টিয়ারাণী টিয়ারাণী


প্রগাঢ় চুম্বন ক্রমে টানিতেছে তাহাদের

তুলোর বালিশে মাথা রেখে আর মানবীয় ঘুমে

স্বাদ নেই; এই নিচু পৃথিবীর মাঠের তরঙ্গ দিয়ে

ওই চূর্ণ ভূখণ্ডের বাতাসে— বরুণে

ক্রূর পথ নিয়ে যায় হরিতকী বনে— জ্যোৎস্নায়।

যুদ্ধ আর বাণিজ্যের বেলোয়ারি রৌদ্রের দিন

শেষ হ’য়ে গেছে সব; বিনুনিতে নরকের নির্বচন মেঘ,

পায়ের ভঙ্গির নিচে বৃশ্চিক— কর্কট— তুলা— মীন।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন